সুনামগঞ্জ , শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫ , ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সীমান্তে তৎপর বিজিবি : এক বছরে ৪২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ সুপ্তপ্রতিভা খেলাঘর আসরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত জামালগঞ্জে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির শীতবস্ত্র বিতরণ ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব আলোকিত সুনামগঞ্জ মানবিক সংগঠনের বৃত্তি বিতরণ মধ্যনগরে ৭৯ বস্তা চিনি ও নৌকা জব্দ ধর্মপাশায় মাছ লুটের ঘটনায় মামলা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শ্রমিক-মালিকের কোনো বৈষম্য থাকবে না : জেলা জামায়াত আমীর ধান-চাল সংগ্রহ সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত গাঁজা-ইয়াবাসহ গ্রেফতার ৪ সীমান্তে ২ ভারতীয় নাগরিক আটক হাওরে বোরো আবাদের ধুম সংস্কার হচ্ছে ছাতক-সিলেট রেলপথ জামালগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন জাতীয় পার্টির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত দেশের প্রত্যেকটা আন্দোলন-সংগ্রামকে সফল করেছে ছাত্রদল পাথারিয়া ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বিশ্বম্ভরপুরে বিএনপি’র আনন্দ মিছিল মাইজবাড়িতে ‘ভাইয়াপি রোয়া উৎসব’ বছরের প্রথম দিনে মিলেনি নতুন বই খালি হাতে ফিরেছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী

শাহ আব্দুল করিমের জীবনকথা

  • আপলোড সময় : ০১-০১-২০২৫ ০১:০৯:০৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০১-২০২৫ ১০:০৭:৫৮ অপরাহ্ন
শাহ আব্দুল করিমের জীবনকথা
আদিল আরমান শাহ আব্দুল করিম বাংলাদেশের মরমি ধারার আধুনিক কবিদের অন্যতম। তিনি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা ১৩২২ সনের ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ধল-আশ্রম গ্রামে এক দরিদ্র্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইব্রাহীম আলী এবং মাতার নাম নাইওরজান বিবি। বাবা-মা’র ছয় সন্তানের মধ্যে শাহ আব্দুল করিম ছিলেন প্রথম সন্তান এবং একমাত্র পুত্র। অন্য সন্তানরা অর্থাৎ শাহ আব্দুল করিমের ছোট বোনেরা ছিলেন- ছাওধন বিবি, রাফিক বিবি, মালা বিবি, ফুলজান বিবি ও ফুলবাহার বিবি। ১৯৫৭ সাল থেকে উজানধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস। জীবন চলার পথে শাহ আব্দুল করিম অনেক সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছোটবেলায় দেখেছেন অভাব আসলে কি জিনিস। একজন বড়লোকের বাড়িতে কিশোরকাল কেটেছে পেটে ভাতে কাজ করে। একবার বেকার ছিলেন, তখন এক মহাজনের দোকানে চাকরি নিলেন, বেতন যা পেতেন তা বাবা-মা’র হাতে তুলে দিতেন। আসলে রাখালের কঠিন জীবনই তাঁর কিশোরকাল ঘিরে রেখেছিল। সেই ভোরে গরু নিয়ে বের হয়ে ফিরতে হতো সূর্য ডোবার পর। এছাড়াও সকাল-বিকাল দুধ দহনে থাকতে হত। এই সময়ে ঈদের দিনেও ছুটি পেতেন না এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। আর যদি শিক্ষার কথা বলি তবে শাহ আব্দুল করিম মাত্র আট রাত লেখাপড়া করেছেন। তখন গুজব ওঠে-যারা এই স্কুলে পড়বে তাদের ব্রিটিশ যুদ্ধে পাঠাবে। সেই ভয়ে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। এই যোগ্যতা সঙ্গে নিয়ে শাহ আব্দুল করিম গানের যাত্রা শুরু করেন। সাধক রশিদ উদ্দিনের বাড়িতে মাত্র পাঁচদিন অবস্থান করে ওস্তাদের আশীর্বাদ নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। এরপর তিনি সারাদেশব্যাপী বাউলগান নিয়ে বিচরণ করেন। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানী টাঙ্গাইলে কাগমারী সম্মেলন ডাকেন। শাহ আব্দুল করিম সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে মওলানা ভাসানী ছাড়া ও শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতাদের সাথে তাঁর দেখা হয়। কাগমারী সম্মেলনে শাহ আব্দুল করিম একটি গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর মওলানা ভাসানী শাহ আব্দুল করিমের পিঠে হাত রেখে বলেছিলেন, গানের হাল ছেড়ো না তুমি একদিন গণমানুষের শিল্পী হবে। সামনে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর সিলেটে গণসংযোগে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুরের সঙ্গ করেন শাহ আব্দুল করিম। দেশের বরেণ্য নেতৃবৃন্দের জনসভায় শাহ আব্দুল করিম গণসঙ্গীত পরিবেশন করে জনগণকে উজ্জীবিত করেছিলেন। গণসঙ্গীত শুনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন, আমরা বক্তব্য কি বলবো শাহ আব্দুল করিম তাঁর গানেই সবকিছু বলে ফেলেছেন। এভাবেই সারাদেশের মানুষের মন জয় করেন শাহ আব্দুল করিম। বাংলাদেশের প্রবাসীদের আমন্ত্রণে শাহ আব্দুল করিম ও দূর্বিন শাহ ১৯৬৪ সালে লন্ডনে বিলাত সফর করেন। বিলাতে রসের নাগর শাহ আব্দুল করিম ও জ্ঞানের সাগর দূর্বিন শাহ তিন মাস গান করে প্রবাসীদের মুগ্ধ করেন। শাহ আব্দুল করিম ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয়বার লন্ডনে বিলাত সফর করেন। তখন তাঁর সাথে ছিলেন শিল্পী শফিকুন্নুর, রুহী ঠাকুর, কাজী আয়শাসহ আটজন শিল্পী। শাহ আব্দুল করিম ২০০৭ সালে শেষবার অর্থাৎ তৃতীয়বার লন্ডন সফর করেন। এবার সাথে ছিলেন তাঁর ছেলে শাহ নূরজালাল। কিন্তু বয়সের কারণে শাহ আব্দুল করিম দীর্ঘ ভ্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। লন্ডনের রয়াল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। একমাস চিকিৎসার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। অর্থাৎ শাহ আব্দুল করিম ১৯৬৪, ১৯৮৫ ও ২০০৭ সালে মোট তিনবার লন্ডন সফর করেন। ২০০১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘একুশে পদক’ প্রদান করেন। এছাড়াও ২০০৪ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা। ২০০৫ সালে সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক এওয়ার্ড। ২০০৬ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সংবর্ধনা। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা। ২০০৬ সালে অভিমত সম্মাননা। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা। ২০০৮ সালে খান বাহাদুর এহিয়া সম্মাননা পদকসহ দেশ-বিদেশে বহু পদক সম্মাননা ও সংবর্ধনা পেয়েছেন। এই সকল সম্মাননা ও সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় সমাজের মানুষ তাঁকে কতটা ভালোবাসত। তাঁর প্রকৃত সংবর্ধনা হবে তখনই যখন মানুষে মানুষে পার্থক্য থাকবে না, থাকবে না সমাজে শোষণ, অত্যাচার, নিপীড়ন, থাকবে না সাম্রাজ্যবাদী চেতনার শেষ শ্বাসটুকু। প্রকৃতভাবে শাহ আব্দুল করিমকে চর্চা করতে পারলেই এ ব্যাপারে সফলতা আসতে পারে। মানুষ মরণশীল। প্রকৃত নিয়মেই প্রস্থান। ২০০৯ সালে ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৭.৫৮ মিনিটে ৯৩ বছর বয়সে আত্মীয়-স্বজন শিষ্য-ভক্তদের কাঁদিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। নামে শোকায়ত মানুষের ঢল। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের লোকজন শোক প্রকাশ করেন। ১৩ সেপ্টেম্বর শাহ আব্দুল করিমকে তাঁর সহধর্মিণী সরলা খাতুনের পাশে বসতবাড়িতে সমাহিত করা হয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
সুপ্তপ্রতিভা খেলাঘর আসরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

সুপ্তপ্রতিভা খেলাঘর আসরের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত